সুদখোরদের চাপে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা


সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ১৯, ২০২২, ০৮:১৮ পিএম
সুদখোরদের চাপে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে যুবকের আত্মহত্যা

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সুদ কারবারিদের দায়ী করে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে ফয়সাল আহমেদ সৌরভ (৩৫) নামের এক যুবক। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার বালিজুরী ইউনিয়নের পাতারী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

সৌরব উপজেলার পাতারী গ্রামের আজিজুর রহমান মকদছের ছেলে। তার চার মাসের এক মেয়ে আছে।  

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) রাত সাড়ে ৮টায় পাতারী গ্রামের পশ্চিম মাথায় বট গ্রাছের ডালে ঝুলন্ত অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে পরিবারের লোকজন। তাৎক্ষণিক পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে রাত ১০টায় চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় ওই সুদখোরদের কঠিন শাস্তির দাবি করেছেন এলাকাবাসী।

এ ঘটনায় নিহতের পিতা বাদী হয়ে শুক্রবার (১৯ আগস্ট) দুপুরে তাহিরপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বালিজুরী ইউনিয়নের বিট পুলিশিং অফিসার নাজমুল হাসান জানান, “নিহতের ফেসবুক পোস্টে অভিযুক্ত সুদখোর সফিক মিয়া আনোয়ারপুর গ্রামের আবদুল কাহারের ছেলে ও রফিক মিয়া পার্শ্ববর্তী বাদাঘাট ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৃহস্পতিবার আনুমানিক রাত ৭টার দিকে ফয়সাল আহমেদ সৌরভ তার নিজের ফেইসবুক আইডি থেকে সুদ ব্যবসায়ীদের নাম উল্লেখ একটি পোস্ট দেন। তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-

“আমি গলায় দরি দিমাল তোই রফিকের লাগি তোই আমারে কাবু করিয়া লাষ বানাই লি,তোই ভাল থাক বেইমান,সফিকের কাছ থেকে এক লক্ষ টাকা আনছিলাম সুনদে,তিন লক্ষ টাকা সুদ দিয়েও সারে তিন লক্ষ এখনও পায়,এই রফিক আর সফিকের লাগি আত্মহত্যা করলাম,ভাল থাক আমার পরিবার মা ফাইজা আমায় ক্ষমা করো মা বাবা,ভাই বোন তোমারা ক্ষমা করিয় বউ তোমাকে কিছু বলার নাই....?
ইতি
এক কাপুরুষ!!!”

সৌরভের এই পোস্ট পরিচিতজন ও পরিবারের সদস্যদের নজরে এলে তারা খোঁজতে বের হন সবাই। এক পর্যায়ে বাড়ি থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরের রক্তি নদী পাশে বটগাছের ডালে একটি গাছে রশিতে ঝুলন্ত অবস্থায় সৌরভের লাশ পাওয়া যায়। তাৎক্ষণিক পরিবারের লোকজন তাকে উদ্ধার করে পার্শ্ববর্তী বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত সৌরভের বাবা ও পরিবারের সদস্যরা বলেন, “উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়নের নূরপুর গ্রামের রফিক মিয়া ও বালিজুরী ইউনিয়নের আনোয়ারপুর বাজারের শফিক মিয়ার কাছ থেকে এক লাখ টাকা নেয় সৌরভ। দীর্ঘদিন ধরে উচ্চহারে সুদ দিলেও তাদের আসল টাকা শোধ হয়নি। এরপরও থেকে সৌরভকে মানসিক নির্যাতন করতে থাকে ও সুদখোররা বৃহস্পতিবার বিকালে সৌরভের চুনাপাথর ভর্তি নৌকা উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের কামালপুর গ্রামে আটক করে সাড়ে তিন লাখ টাকা চাইলে না দেওয়ায় নানান অশ্লীল ভাষায় গালাগালি করে ভয়ভীতি দেখায় ও হুমকি দেয়। এ কারণেই সৌরভ আত্মহত্যা করেছে। আমরা এর কঠিক বিচার চাই।”

সৌরভের পরিবারের এমন অভিযোগের বিষয়ে রফিক আর সফিকের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

তাহিরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সোহেল রানা বলেন, “সুদের টাকার জন্য এক যুবকের আত্মহত্যার পর লাশ বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমেপ্লেক্সে থেকে বিশ্বম্ভরপুর থানা পুলিশ উদ্ধার করে শুক্রবার সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ময়নাতদন্তর শেষে দুপুরে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। জুম্মার নামাজের পর জানাজা শেষে লাশ দাফন করা হয়েছে। এ বিষয়ে নিহতের পিতা বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি।”

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!