• ঢাকা
  • শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর, ২০২৫, ২২ কার্তিক ১৪৩২, ১৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

এক শিক্ষক দিয়ে পাঠদান, কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমিয়ে প্রশাসন


সুজন মোহন্ত, কুড়িগ্রাম
প্রকাশিত: আগস্ট ১৩, ২০২২, ১০:২৫ এএম
এক শিক্ষক দিয়ে পাঠদান, কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমিয়ে প্রশাসন

কুড়িগ্রামে চিলমারীতে গত দুই বছর ধরে নটারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একজন শিক্ষক দিয়ে চলছে পাঠদান কার্যক্রম। দীর্ঘদিন ধরে একজন শিক্ষক দিয়ে শ্রেণিতে পাঠদান চললেও কর্তৃপক্ষের কোনো তদারকি নেই বিদ্যালয়টিতে।

শিক্ষক সংকটের কারণে ইতিমধ্যে বিদ্যালয়টিতে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন ক্ষুদে অনেক শিক্ষার্থী। ফলে স্কুলের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের মুখে পড়লেও কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমিয়ে আছে উপজেলা শিক্ষা অফিস।

সভাপতির দায়িত্ব পেয়েও সহকারী শিক্ষা অফিসার একবারও পরিদর্শন করেননি স্কুলটি। নেননি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা। ফলে বেহাল দশা এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের।

বৃহস্পতিবার (১১ আগস্ট) চিলমারী নৌবন্দর থেকে শ্যালো নৌকায় দেড় ঘণ্টা যাওয়ার পর উপজেলার অস্টমীর চর ইউনিয়নের ডাটিয়ার চর গ্রামে অবস্থিত নটারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পৌঁছান আমাদের প্রতিবেদক। স্কুলে শিক্ষার্থীরা তখন বিচ্ছিন্নভাবে ক্লাস ও ক্লাসের বাইরে অবস্থান করছে।

ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মোছা. রোজিনা খাতুন জানান, তিনি একাই গত দুই বছর ধরে স্কুলে পাঠদান চালিয়ে আসছেন। স্কুলটি ১৯৯১ সালে ব্রহ্মপুত্র নদের কোলে অবস্থিত নটারকান্দি গ্রামে প্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৮ সালে স্কুলটি নদীগর্ভে বিলীন হলে ওই বছর পার্শ্ববর্তী ডাটিয়ার চরে স্কুলটি পুনরায় প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই থেকে স্কুলটি এখানেই রয়েছে। ২০১৩ সালে স্কুলটি জাতীয়করণের সময় পাঁচজন শিক্ষক দিয়ে স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এরপর ২০২০ সালে পর্যায়ক্রমে স্কুলের চারজন শিক্ষক অবসরে যান। এর পর থেকে ওই বিদ্যালয়ে আর কোনো শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে গত দুই বছর ধরে একজন শিক্ষক দিয়ে স্কুল পরিচালনা করায় শিক্ষার্থী ঝরে পরে বেহাল দশা হয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির। স্কুলের হাজিরা খাতা অনুযায়ী বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮৭ জন। কিন্তু হাজিরা খাতায় দেখা যায় স্কুলে সব ক্লাস মিলে নিয়মিত উপস্থিত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৭৭ জন।

অভিভাবক মাহমুদ আলী, স্থানীয় অধিবাসী জহুরুল ইসলাম ও জব্বার আলী জানান, এডহক কমিটির আহ্বায়ক হয়েও এই স্কুলে একবারও পরিদর্শনে আসেননি উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার এ কে এম জাকির হোসেন। তার অবহেলার কারণে স্কুলটির শিক্ষা কার্যক্রম এখন ধ্বংসের পথে। শূন্যপদে চরাঞ্চলের শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়ারও দাবি জানান তারা।

বিদ্যালয়ের ৩য় শ্রেণির শিক্ষার্থী সীমা, মেরিনা ও ফারিয়া জানায়, স্কুলে শিক্ষক না থাকায় সিলেবাস অনুযায়ী পড়াশোনা হচ্ছে না। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা অন্য প্রতিষ্ঠানে চলে গেছে। আমাদের পড়াশোনাও ঠিকমতো হচ্ছে না।

যোগদানের পর স্কুল পরিদর্শন না করার কথা অস্বীকার করে উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার এ কে এম জাকির হোসেন বলেন, “আমি চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের শেষের দিকে উপজেলায় যোগদান করেছি। নানান ব্যস্ততার কারণে স্কুল পরিদর্শন করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি প্রশাসনের নজরে রয়েছে। দ্রুত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, “জেলা উন্নয়ন কমিটির সভায় বিষয়টি আমার নজরে আসে। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন। এর আলোকে ২-৩ জন খণ্ডকালীন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। যাদের বেতন উপজেলা প্রশাসন থেকে ব্যয় করা হবে। পরবর্তী সময়ে শিক্ষক নিয়োগ হলে এ সমস্যা আর থাকবে না।”

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!