ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ এখন তুঙ্গে। চলছে পাল্টাপাল্টি হামলা। আকাশে যুদ্ধবিমান, সাগরে রণতরি, সবই প্রস্তুত। তবে এর মাঝেই নতুন করে শঙ্কা ছড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একমাত্র ‘বাঙ্কার বাস্টার’।
৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের এই ভয়ংকর বোমা একবার ব্যবহার করা হলে পালটে যেতে পারে গোটা যুদ্ধের দৃশ্যপট। কারণ, এটি এমন এক বোমা, যা পাহাড়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা পারমাণবিক স্থাপনাও গুঁড়িয়ে দিতে পারে সহজেই।
ইরান-ইসরায়েলের হামলা পাল্টা হামলার ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে তেহরানের ফর্দো পারমাণবিক স্থাপনায় ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা দিয়ে হামলা চালানোর কথা ভাবছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন ভাবনার পরই ‘বাঙ্কার বাস্টার’ বোমা নিয়ে উদ্বেগের পাশাপাশি তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন।
বাঙ্কার বাস্টার বোমা কী
বাঙ্কার বাস্টার একধরনের বিশেষ ডিজাইন করা বোমা, যা সাধারণ মাটি বা শক্ত কংক্রিটের স্তর ভেদ করে লক্ষ্যবস্তুর গভীরে প্রবেশ করতে সক্ষম। ভেতরে গিয়ে নির্দিষ্ট গভীরতায় বিস্ফোরিত হয়ে প্রবল ধ্বংসাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
উৎপত্তি ও ইতিহাস
১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় এ ধরনের বোমার ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। ইরাকের তখনকার শাসক সাদ্দাম হোসেন তার বহু সেনাঘাঁটি ও অস্ত্রাগার মাটির নিচে তৈরি করেছিলেন। সেগুলো সাধারণ বোমা দিয়ে ধ্বংস করা যাচ্ছিল না।
তখন যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত বাঙ্কার বাস্টার জাতীয় বোমার বিকাশ ঘটায়। প্রথম প্রজন্মের বাঙ্কার বাস্টার ছিল জিবিইউ-২৮। এরপর আরও শক্তিশালী মডেল তৈরি হয়েছে- যেমন জিবিইউ-৫৭এ/বি, যার ওজন প্রায় ১৪ হাজার কেজি।
কীভাবে কাজ করে
বাঙ্কার বাস্টার বোমার আবরণ অত্যন্ত শক্তিশালী, যা সাধারণ স্টিলের চেয়ে বেশি দৃঢ় ধাতু দিয়ে তৈরি হয়। যাতে প্রবেশের সময় ছিন্নভিন্ন না হয়ে যায়। বিমান থেকে উচ্চগতিতে নিক্ষিপ্ত হয়ে এটি প্রচণ্ড গতি এবং ভরের কারণে মাটি বা কংক্রিটের স্তর ভেদ করে।
লক্ষ্যমাত্রার গভীরতায় পৌঁছানোর পর টাইমার বা সেন্সর-নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণের ফলে ভূগর্ভস্থ বা প্রতিরক্ষিত কাঠামো সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়ে।
ব্যবহৃত হয় কোথায়
বাঙ্কার বাস্টার বোমার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য আন্ডারগ্রাউন্ড পারমাণবিক গবেষণাগার, কমান্ড সেন্টার, মিসাইল সাইলো, বাংকার বা ফোর্টিফায়েড সামরিক ঘাঁটি, গোপন টানেল ও অস্ত্রভান্ডার।
বিশ্বের কোন কোন দেশের কাছে রয়েছে এই বোমা
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, রাশিয়া, চীনসহ বেশ কয়েকটি সামরিক শক্তিধর দেশের কাছে উন্নতমানের বাংকার বাস্টার বোমা রয়েছে। বিশেষ করে ইরানের আন্ডারগ্রাউন্ড পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্য করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বাঙ্কার বাস্টার বহনকারী বিমান মহড়া দেওয়ার ঘটনাও আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে আলোচিত।