কী ঘটতে যাচ্ছে ৫ জুলাই, কেন এত আতঙ্ক

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৫, ০৯:১২ এএম
ছবি : সংগৃহীত

ভবিষ্যতের বিভিন্ন ঘটনার কথা আগেই জানিয়ে গোটা পৃথিবীকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন অনেকেই। এদের মধ্যে আলোচিত নাম নস্ত্রাদামুস ও বাবা ভাঙ্গা। সেই তালিকায় নাম রয়েছে জাপানের একজনের, তিনি রিও তাতসুকি। তার বহু ভবিষ্যদ্বাণী ফলে গিয়েছে। এবার আরেকটি ভবিষ্যদ্বাণী আলোচনায়। আর সেটি হলো, ‘৫ জুলাই বিপর্যয় নেমে আসবে জাপানে।’ 

জাপানের সংবাদমাধ্যম জাপান টাইমস বলছে, এই তাতসুকিই বলেছিলেন, গোটা দুনিয়ায় ধেয়ে আসছে এক মহামারি। আর করোনা সেটিই। এই ভাইরাস ত্রাসের সৃষ্টি করেছিল গোটা দুনিয়ায়। ভবিষ্যদ্বাণী ফলে যাওয়ার কারণে রিও তাতসুকিকে বলা হয় জাপানের ‘বাবা ভাঙ্গা’।


ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান বলছে, রিও তাতসুকির কাছে ভবিষ্যতের কোনো ঘটনা আসে স্বপ্নের মতো করে। তিনি একজন মাঙ্গা শিল্পী, অর্থাৎ কার্টুন শিল্পী। স্বপ্নে দেখা সেই সব ভবিষ্যতের ঘটনা ফুটিয়ে তুলেন তার কার্টুনের মাধ্যমে। এভাবেই তিনি বলেছিলেন, ১৯৯৫ সালে কোবের ভূমিকম্পের কথা, টি হকু ভূমিকম্পের কথা, ২০১১ সালের সুনামির কথা এবং সর্বোপরি করোনা মহামারির কথা।

১৯৯৯ সালে নিজের লেখা বই ‘দ্য ফিউচার আই স’–তে ২০২১ সালে তাতসুকি কিছু নতুন তথ্য যুক্ত করেন। তাতে তিনি লেখেন, ২০২৫ সালের ৫ জুলাই ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়বে জাপান। 
অনেকেই এই কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। কিন্তু তাতসুকি অতীতে বিভিন্ন ঘটনার কথা আগাম বলে দিয়েছিলেন। এ কারণে ৫ জুলাই নিয়ে আতঙ্ক কাটছে না।

মাঙ্গা আর্টিস্ট হিসেবে জাপানে পরিচিত রিও তাতসুকি। এরকম অনেক কার্টুন আর্টিস্টই রয়েছে জাপানে। কিন্তু তাতসুকি তাদের থেকে অনেকটাই আলাদা। তাঁর কথা মানুষের নজরে আসে যখন ১৯৯৯ সালে তিনি বলেছিলেন, ২০১১ সালের মার্চে এক বিশাল বিপর্যয় হবে জাপানে। বাস্তবে দেখা গিয়েছিল ২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের টি হকু প্রবল ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। তার জেরে তৈরি হয় এক বিশাল সুনামি। ওই সুনামিতে মৃত্যু হয় ১৫ হাজার মানুষের। বিস্ফোরণ হয়েছিল ফুকুশিমা পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রে।


ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি বলছে, অতীতে তাতসুকির করা কোনো ভবিষ্যদ্বাণীকেই একেবাবে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। কারণ তা বাস্তবে ঘটেছিল। প্রিন্সেস ডায়ানার অকাল মৃত্যুর কথা তিনি বলেছিলেন, বলেছিলেন কোভিডের কথা। এখন যখন তিনি এবছর ৫ জুলাইয়ের কথা বলেছেন, তখনো তাকে উড়িয়েও দিতে পারছেন না অনেকে।

‘দ্য ফিউচার আই স’ বইয়ের ২০২১ সালের সংস্করণে তাতসুকি লেখেন, ‘২০২৫ সালে ৫ জুলাই জাপানে এক বিশাল বিপর্যয় ঘটবে।’ এর বেশি কিছু তিনি বলেননি, সমস্যা এখানেই। ফলে তাতসুকির অতীতের ভবিষ্যদ্বাণীর কথা মাথায় রেখে অনেকেই তাদের আতঙ্কের কথা জানাচ্ছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। শোরগোল পড়েছে দেশে দেশে।

অনেকেই এই ভবিষ্যদ্বাণী প্রসঙ্গে বলেছেন, ৫ জুলাই ভয়ানক ভূমিকম্প হবে জাপানে। আর এই ভূমিকম্প থেকেই জাপানে আছড়ে পড়তে পারে ভয়াবহ সুনামি। জাপান ও ফিলিপাইনের মধ্যে সমুদ্রের তলদেশে বিভক্তির ফলে সুনামি বা ভূমিকম্প হতে পারে। 

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন বলছে, এই ভবিষ্যদ্বাণীর পরেই বিভিন্ন দেশের পর্যটকরা তাঁদের জাপানযাত্রা বাতিল করে দিয়েছেন। জাপানি সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, হংকং থেকে জাপানগামী একাধিক বিমানের টিকিট বাতিল হয়েছে। ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, জুনের শেষ এবং জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে জাপানগামী বুকিং ৮৩ শতাংশ কমে গেছে। শুধু হংকং থেকেই গড়ে ৫০ শতাংশ বুকিং বাতিল হয়েছে।


তবে জাপান সরকার এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘এই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং এর কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই। সাধারণ মানুষকে অনুরোধ করা হচ্ছে যেন তারা গুজবে কান না দেন’। তবে কিছু ভূতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞ সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে টেকটোনিক প্লেটের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে জাপানে সম্ভাব্য বড় ধরনের ভূমিকম্প ও সুনামির আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যা তাতসুকির পূর্বাভাসের সঙ্গে মিলে গেছে।

ভয়াবহ ভূমিকম্প ছাড়াও, রিও তাতসুকি ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, ২০৩০ সালে, আরেকটি মারাত্মক ভাইরাসের আবির্ভাব ঘটবে, যা লাখো মানুষের জীবন কেড়ে নিতে পারে।