হেপাটাইটিস গুরুতর লিভারজনিত রোগ। যা লিভারে প্রদাহ সৃষ্টি করে। এটি সাধারণত ভাইরাস, মদ্যপান, ওষুধের প্রতিক্রিয়া, বা অটোইমিউন সমস্যার কারণে হয়। ভাইরাল হেপাটাইটিসই সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। যার মধ্যে A, B, C, D ও E টাইপ সবচেয়ে প্রচলিত। হেপাটাইটিসের চিকিৎসা সাধারণত এর ধরন, তীব্রতা এবং রোগীর শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে আলাদা হয়।
হেপাটাইটিস A ও E
এই দুই ধরনের হেপাটাইটিস সাধারণত খাবার ও পানির মাধ্যমে ছড়ায়। এগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নিজে নিজে সেরে যায়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম, প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল পান, হালকা ও সহজপাচ্য খাবার খাওয়া, বমি বা ডায়েরিয়া হলে স্যালাইন দেওয়ার মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা হয়। তবে যদি জন্ডিস বেড়ে যায় বা ১০ দিনের মধ্যে উপশম না হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
হেপাটাইটিস B:
হেপাটাইটিস B একটি মারাত্মক ভাইরাল সংক্রমণ যা রক্ত, বীর্য ও শরীরের অন্যান্য তরলের মাধ্যমে ছড়ায়। এটি তীব্র ও দীর্ঘমেয়াদী (ক্রনিক) – উভয় রূপে হতে পারে। তীব্র হেপাটাইটিস B বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজে নিজে ভালো হয়ে যায়। চিকিৎসায় মূলত উপসর্গ নিরাময়ের দিকে মনোযোগ দেওয়া হয়। রোগীকে বিশ্রামে রাখা হয়, জন্ডিস ও দুর্বলতা কমানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
ক্রনিক হেপাটাইটিস B-এ আক্রান্ত হলে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে হয়। ক্রনিক হেপাটাইটিস B থেকে লিভার সিরোসিস বা লিভার ক্যানসার পর্যন্ত হতে পারে। তাই নিয়মিত ফলো-আপ ও চিকিৎসা জরুরি।
হেপাটাইটিস C:
হেপাটাইটিস C রক্তের মাধ্যমে ছড়ায় এবং এটি প্রাথমিকভাবে নিরব থাকে। একসময় এটি লিভারকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
বর্তমানে হেপাটাইটিস C পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য। ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে অনেক ক্ষেত্রে ভাইরাস নির্মূল হয়। চিকিৎসার আগে জিনোটাইপ পরীক্ষা করা হয়। তবে নিয়মিত ওষুধ সেবন, ডাক্তারের পরামর্শ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন মেনে চলতে হয়।
অটোইমিউন হেপাটাইটিস
এই ধরনের হেপাটাইটিসে শরীর নিজের লিভারকেই শত্রু ভেবে আক্রমণ করে। এতে দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা লাগে। নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা ও লিভার ফাংশন মনিটরিং প্রয়োজন হয়।
হেপাটাইটিস প্রতিরোধে যা মানতে হবে
অ্যালকোহল বর্জন করা জরুরি। চর্বিযুক্ত খাবার কম খেতে হবে। হেপাটাইটিস B ও A টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তবে ইনজেকশনের সময় নতুন সিরিঞ্জ ব্যবহার। রক্ত নেওয়ার সময় নিরাপদ উৎস নিশ্চিত করা জরুরি। যৌনসঙ্গমে সুরক্ষা অবলম্বন করতে হবে। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে।