দ্রুত ছড়াচ্ছে ‍‍`স্ক্যাবিস‍‍`, লক্ষণ জেনে রাখুন

সংবাদ প্রকাশ ডেস্ক প্রকাশিত: মে ৩, ২০২৫, ০৬:০৯ পিএম
ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে স্ক্যাবিস নামক একটি চর্মরোগ দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ। যা খুব সহজেই এক ব্যক্তি থেকে আরেক ব্যক্তির মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। অসচেতনতা, গোষ্ঠীবদ্ধ বসবাস এবং স্বাস্থ্যবিধির অভাব এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার অন্যতম কারণ।

স্ক্যাবিস কী
স্ক্যাবিস এক ধরনের তীব্র চুলকানিযুক্ত চর্মরোগ। যা একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পরজীবী “সারকোপটিস স্ক্যাবেই” নামক মাইট বা উকুন দ্বারা সংক্রমিত হয়। এই মাইটগুলো মানুষের চামড়ার উপরের স্তরে বাসা বাঁধে এবং সেখানে ডিম পাড়ে। এদের সংক্রমণে তীব্র চুলকানি, ফুসকুড়ি এবং ত্বকে বিভিন্ন রকমের ফুসকুড়ি দেখা দেয়।

কীভাবে ছড়ায়
স্ক্যাবিস মূলত ঘন ঘন শরীরের সংস্পর্শে আসার মাধ্যমে ছড়ায়। পরিবারের সদস্যরা একই বিছানা, বালিশ, তোয়ালে বা কাপড় ব্যবহার করলে। স্কুল, হোস্টেল, আশ্রয়কেন্দ্র কিংবা শ্রমিক ক্যাম্পে অনেকে গাদাগাদি করে থাকলে। রোগীর সঙ্গে দীর্ঘ সময় এক বিছানায় বা ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে থাকলে। এছাড়া, দুর্বল স্বাস্থ্যব্যবস্থা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাব থাকলে রোগটি দ্রুত বিস্তার করে।

স্ক্যাবিসের লক্ষণ কেমন হয়
স্ক্যাবিসে আক্রান্ত হলে বেশ কিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন_

সাধারণত আক্রান্ত স্থান হয়
আঙুলের ফাঁক, কব্জি, কোমর, বগল, নাভির চারপাশ, স্তনের নিচে ও যৌনাঙ্গের আশেপাশে।বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মাথা, মুখ এবং হাত-পায়ের তালুতে ফুসকুড়ি হতে পারে।

তীব্র চুলকানি
আক্রান্ত স্থানে তীব্র চুলকানি হয়। বিশেষ করে রাতে, যখন শরীর গরম থাকে, তখন চুলকানির তীব্রতা বাড়ে।

চামড়ায় লালচে ফুসকুড়ি
আক্রান্ত স্থানে ছোট ছোট গুটি বা ফোসকার মতো পড়ে। যা অনেক সময় ঘষলে ছড়িয়ে পড়ে।

স্ক্র্যাচ মার্ক
চুলকাতে চুলকাতে আক্রান্ত স্থানে আঁচড়ের দাগ ও ইনফেকশন হয়ে যেতে পারে।

কারা বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে

শিশু ও বৃদ্ধরা, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, যারা গোষ্ঠীবদ্ধ পরিবেশে বাস করেন (যেমন হোস্টেল, কারাগার, শরণার্থী শিবির), যাদের নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সুযোগ নেই তাদের মধ্যে এই রোগ বেশি ছড়াচ্ছে।

কীভাবে শনাক্ত করা হয়?
স্ক্যাবিস সাধারণত রোগীর উপসর্গ ও চর্ম পরীক্ষা করেই নির্ণয় করা হয়। চিকিৎসক কখনো কখনো আক্রান্ত ত্বকের স্ক্র্যাপিং নিয়ে মাইক্রোস্কোপে পরীক্ষা করে মাইট বা ডিম শনাক্ত করেন।

স্ক্যাবিস প্রতিরোধে করণীয়

স্ক্যাবিস প্রতিরোধের জন্য সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারের সবাইকে একসঙ্গে চিকিৎসা নিতে হবে, যদিও উপসর্গ না-ও থাকে। ব্যবহৃত কাপড়, বিছানা, বালিশ কভার ইত্যাদি গরম পানিতে ধুয়ে ভালোভাবে রোদে শুকাতে হবে। ২-৩ দিন ব্যবহৃত না হলে মাইট স্বাভাবিকভাবেই মারা যায়, তাই অনাক্রম্য জিনিসপত্র কয়েকদিন আলাদা করে রাখা যেতে পারে। ঘন ঘন হাত ধোয়া, শরীর পরিষ্কার রাখা এবং পরিচ্ছন্ন কাপড় পরিধান করতে হবে।

মনে রাখবেন,  স্বাস্থ্যসচেতনতা ও সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্ক্যাবিস সম্পূর্ণভাবে প্রতিরোধযোগ্য ও নিরাময়যোগ্য।