সাংবাদিকের মোবাইল কেড়ে নিয়ে সমন্বয়ক বললেন, ‘তখন আমার মাথা গরম ছিল’

রংপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ২৯, ২০২৫, ১০:১৮ পিএম

রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) বাজেট বৈষম্য নিরসনের দাবিতে চলমান আন্দোলনে নিজেদের মধ্যে বিভাজনে জড়িয়েছেন সমন্বয়কারীরা। এসময় তাদের মধ্যে বাগবিতণ্ডাও হয়। এ ঘটনার ভিডিও ধারণ করার সময় সাংবাদিকের মোবাইল কেড়ে নেন শাহরিয়ার সোহাগ নামে এক সমন্বয়ক।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে এই ঘটনা নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সাংবাদিকের ওপর এমন আচরণকে অনেকে গণমাধ্যম স্বাধীনতার লঙ্ঘন হিসেবে দেখছেন।

এ বিষয়ে দৈনিক সংবাদ পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আবু সাঈদ বলেন, “আজকের কর্মসূচি ছিল স্মারকলিপি প্রদান। সময়মতো আমি উপস্থিত হয়ে দেখি, চত্বরে কেউ নেই। মূল ফটকের দিকে এগিয়ে গেলে কয়েকজন সমন্বয়ককে প্রস্তুতি নিতে দেখি। সেখানে অপেক্ষা করতে থাকি। হঠাৎ দেখি সমন্বয়ক সোহাগ ও জয় নিজেদের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়িয়ে পড়েন। আমি ভিডিও ধারণ করতেই সোহাগ ক্ষিপ্ত হয়ে আমার হাত থেকে মোবাইল ফোন কেড়ে নেন। পরে শিক্ষার্থীদের সহায়তায় মোবাইল ফেরত পাই।”

এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থী আহমাদুল হক আলবির বলেন, “নেতাদের দ্বন্দ্বে আন্দোলন কার্যত ভণ্ডুল হয়ে যায়। আমরা আন্দোলনের জন্য জড়ো হলেও তারা নিজেদের মধ্যে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। ভিডিও করছিলেন সাংবাদিক আবু সাঈদ, তখনই সোহাগ মোবাইল কেড়ে নেন।”

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত সমন্বয়ক শাহরিয়ার সোহাগ বলেন, “আমি ফোন কেড়ে নিয়ে কোনো ভুল করিনি। তবে সরি বলেছি, কারণ তখন মাথা গরম ছিল। আবু সাঈদকে বলেছি, ‘বন্ধু, সিচুয়েশনটা বুঝতে পারতেছ?’ ভিডিও বন্ধ করার জন্যই ফোন নিয়েছি।”

এ বিষয়ে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো. ফেরদৌস রহমান বলেন, “সাংবাদিকরা এর আগেও ফ্যাসিস্টদের আক্রমণের শিকার হন। আবু সাঈদের ক্যাম্পাসে সাংবাদিকরা যদি আবারও এরকম ঘটনার সম্মুখীন হয় তাহলে এটা মেনে নেওয়ার মতো না।”

উল্লেখ্য, রংপুরসহ উত্তরবঙ্গের প্রতি বাজেট বৈষম্য নিরসনের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৈষম্য নিরসনে দুই দফা দাবি বাস্তবায়নে ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন তারা। দাবি আদায় না হলে অসহযোগ আন্দোলনের হুঁশিয়ারিও দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।  

সোমবার ব্লকেড কর্মসূচি থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ উত্তরবঙ্গে বৈষম্য নিরসনে দুই দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- ১. উত্তরবঙ্গের অনন্তকালের বাজেট বৈষম্য নিরসন ও এ অঞ্চলের সার্বিক (অর্থাৎ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি ও অবকাঠামোগত) উন্নয়ন নিশ্চিতে একটি সতন্ত্র আঞ্চলিক কমিশন গঠন করতে হবে এবং ২. উত্তরবঙ্গের বাতিঘর অর্থাৎ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়কে একটি স্বায়ত্তশাসিত পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তর করতে হবে।

পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনের বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ উপলক্ষে সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের শহীদ আবু সাঈদ চত্বর থেকে ‘মার্চ টু জেলা প্রশাসক’ ও ‘মার্চ টু বিভাগীয় কমিশনার’ কর্মসূচি পালন করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।