চুরির অভিযোগে দড়ি দিয়ে বেঁধে নারীকে নির্যাতন

পঞ্চগড় প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ১০, ২০২৪, ০৮:১৫ পিএম

পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় মোবাইল চুরির অভিযোগে এক নারীকে (২৬) কোমরে দড়ি বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। শুক্রবার (১০ মে) ওই নারীকে হেনস্থা ও কোমরে দড়ি বেঁধে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

বৃহস্পতিবার (৯ মে) সকালে জেলার বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের জেমজুট এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই ভিডিওতে দেখা যায়, ভুক্তভোগী নারীকে একটি ভ্যানগাড়িতে জোরপূর্বক তুলে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছেন একজন ব্যক্তি। তাকে সাহায্য করছেন বেশ কয়েকজন নারী। তারা ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে তর্ক করছেন।

ভুক্তভোগী পরিবারটি জানায়, বৃহস্পতিবার সকালে ওই নারী জেমজুট মিল বাজারে এলে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের ঝলঝলি এলাকার আব্দুল জব্বার একদল নারীসহ এসে তাকে মারধর করে ভ্যানে তুলে দড়ি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যান ওই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের বাড়িতে। সেখানেও নিয়ে জব্বারসহ গ্রামের কিছু লোক তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে আরও মারধর করা হয়। এ সময় যিনিই তাকে রক্ষা করতে এগিয়ে যান, তাকেই মারধর করা হয়। এক পর্যায়ে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আবুর নির্দেশে ওই নারীকে কান ধরে উঠবস করিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। মারধরের শিকার ওই নারী বর্তমানে মানসিকভাবে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।  

নির্যাতনের শিকার ওই নারী বলেন, “আমি জব্বারদের বাড়িতে তার মায়ের সঙ্গে কয়েকদিন ধরে আছি। কথা বলার জন্য ওর মা আমাকে মোবাইলটি দেয়। আমি সেটি নিয়ে কথা বলতে বলতে জেমজুট বাজারে আসি। ওরা কাছের মানুষ। ফোন করলে আমি বলি ফোনটি একটু পর দিয়ে আসছি। এর মধ্যেই মোবাইলটি বন্ধ হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর জেমজুটে এসে মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে আমাকে মারধর শুরু করে জব্বার। পরে আমাকে রশি দিয়ে বেঁধে নিয়ে যায় সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদের বাড়ি। সেখানেও আমাকে মারধর করে।”

ভুক্তভোগী নারীর বোন বলেন, “আমার বোন মানসিকভাবে একটু অসুস্থ। সে হুটহাট করে বাড়ি থেকে চলে যায়। বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলে যারা তাকে আশ্রয় দেয়, তারাই আবার তার বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ তুলছে। মোবাইল চুরির অপবাদ দিয়ে আমার বোনকে জব্বার ও তার সহযোগী নারী পুরুষরা জেমজুট এলাকায় মারধর করে। আমরা যেই তাকে বাঁচাতে গেছি তাকেই মারধর করেছে তারা। শেষে সাবেক চেয়ারম্যানের নির্দেশে আমার বোনকে কান ধরে উঠবস করানো হয়।”

জেমজুট মিল এলাকার ওষুধ ব্যবসায়ী হাবিবুল্লাহ বলেন, “আমি দেখতে পাই এক নারীকে ৮ থেকে ১০ জন নারী ও কয়েকজন পুরুষ হঠাৎ মারধর শুরু করে। তারা জানায় মোবাইল চুরি করায় তারা তাকে ধরতে এসেছে। পরে তারা রশি দিয়ে বেঁধে তাকে ভ্যানে করে নিয়ে যায়। বিষয়টি আমার কাছে খুব খারাপ লেগেছে। তাই মোবাইলে ভিডিও রেকর্ড করি।”

বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ বলেন, “ওই মেয়ে দেহ ব্যবসায়ী। সে মোবাইল চুরি, টাকা চুরিসহ দেহ ব্যবসা করছে। স্থানীয়রা তাকে ধরে এনেছিল। পরে সে ভালো হয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিলে এবং মাপ চাইলে তাকে মাপ করে দেয়া হয়।”

বোদা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোজাম্মেল হক বলেন, “আমরা খবর পাওয়ার পর ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছি। তারা খোঁজ খবর নিচ্ছে। ভুক্তভোগী পরিবার আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাইলে আমরা সর্বাত্মক সহযোগিতা করবো।”