থাইল্যান্ডের বিটরুট চাষে আবু সুফির চমক

নীলফামারী প্রতিনিধি প্রকাশিত: মার্চ ২৩, ২০২৪, ০৩:২৪ পিএম
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া শেষ করে বিটরুট চাষ করেন তরুণ উদ্যোক্তা আবু সুফি আহমেদ।

কৃষি অর্থনীতিনির্ভর উত্তরের জেলা নীলফামারী। জেলার অধিকাংশ মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান অবলম্বন কৃষি। এ জেলার উর্বর দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে বিভিন্ন রকম ফসল আবাদ হয়ে থাকে। তবে এবার কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলছেন ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করা তরুণ উদ্যোক্তা আবু সুফি আহমেদ। জেলায় এই প্রথম চাষ করেছেন থাইল্যান্ডের উচ্চ ফলনশীল সবজি বিটরুট।

নীলফামারী সদর উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের কাছারীপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল গফুরের ছেলে আবু সুফি আহমেদ। ৫১ শতক জমিতে চাষ করেছেন উচ্চ ফলনশীল সবজি বিটরুট। এছাড়া বিভিন্ন চাষাবাদের পাশাপাশি ব্যাক টু নেচার (বিএনএল) কোম্পানি খুলে চাষাবাদের পণ্য দেশের বিভিন্ন সুপারশপে বিক্রি করে আসছেন তিনি।

আবু সুফি আহমেদ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমি পড়াশোনা করেছি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। কিন্তু আমার পছন্দ কৃষি উদ্যোক্তা হওয়া। কৃষিতে নতুন কী চাষাবাদ করা যায় তা নিয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে চাষ করছি।”

আবু সুফি বলেন, “ঢাকা থেকে থাইল্যান্ডের বীজ সংগ্রহ করে জমিতে উত্তম রুপে জৈব ও রাসায়নিক সার দিয়ে ৬-৭ বার চাষ দিয়ে এই বিটরুট বীজগুলো লাগিয়েছি। ডিসেম্বরের শুরুতে বিটরুটের বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। ফসল সংগ্রহ করার মতো উপযুক্ত হতে সময় লাগে ৮০-৯০ দিন। তবে আমার এই বিটরুটগুলোর বর্তমান বয়স ১০০ দিন। মার্চের শেষে ফসলটি সংগ্রহ করে বাজারে বিক্রি করার উপযুক্ত সময়। দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ জাতীয় উর্বর মাটিতে চাষ করলে সার কম লাগে। এ গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি।”

বিটরুট খাওয়ার বিষয়ে আবু সুফি আহমেদ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “বিটরুট হচ্ছে মূলত সুপারফুড। এটা ঔষধি গুণ সমৃদ্ধ। খাবার হিসেবে বড় বড় সুপার শপ, রেস্তোরাঁ, চাইনিজ হোটেলগুলোতে স্যুপ, জুসসহ বিভিন্ন রেসিপি হিসেবে বিক্রি হয়। এ সবজি থেকে উৎপাদিত গুঁড়াও বিক্রি হচ্ছে। সবজিটির পুষ্টিগুণ অনেক। ভিটামিন এ প্রচুর পরিমাণে আছে। উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন রোগের মহৌষধ হিসেবেও এটি খুবই কার্যকর।”

ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন তরুণ উদ্যোক্তা আবু সুফি।

বিটরুট চাষে খরচের বিষয়ে আবু সুফি বলেন, “জমি চাষ থেকে শুরু করে বীজ-সার, লেবার ও পানি খরচ মিলিয়ে বিঘাপ্রতি ৩০ হাজার টাকার খরচ হয়েছে। এখানে আমার সবমিলিয়ে খরচ হয়েছে ৫৫ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার টাকার মতো বিক্রি করেছি। আমি আশা করছি এখানে থেকে আড়াই লাখ টাকার মতো বিটরুট বিক্রি করতে পারব।”

একই এলাকার কৃষক ইদ্রিস আলী সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “আমাদের পাশাপাশি জমিতে তারা এই বিটরুট চাষ করছে। আমরা শুধু দেখতেছি, শুনছি তারা নাকি এটাতে অনেক লাভবান। সামনে আমিও এটা চাষ করতে চাই।“

একই এলাকার মো. আবু সাঈদ নামের আরেক কৃষক সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “এই বিটরুট সম্পর্কে আগে আমরা জানতাম না। প্রথমে ভাবছিলাম এটা মুলা হবে। পরে দেখি অনেক সুন্দর লাল একটি ফল। খেতে অনেক সুস্বাদু। শুনছি এটাতে নাকি অনেক পুষ্টি ও ভিটামিন আছে। বাজারে নাকি এটার দামও বেশি, তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি আগামীতে আমিও চাষ করব।”

নীলফামারী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আতিক আহমেদ সংবাদ প্রকাশকে বলেন, “নীলফামারীতে প্রথম বিটরুট চাষ করেছেন আবু সুফি আহমেদ। সুপারফুড হিসেবে পরিচিতি বিটরুট বিদেশি সবজি। এটি অত্যন্ত পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। বিটরুটে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন, আয়রণ, ক্যালসিয়াম, কপার ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। এতে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ক্যানসার, হৃদরোগসহ বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি হ্রাস করে।”

আতিক আহমেদ আরও বলেন, “কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে তাকে নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। এটি ব্যাপকভাবে উৎপাদন করতে পারলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রাও আয় করা সম্ভব।” এ ধরনের চাষাবাদে যুবকরা আগ্রহী হলে কৃষিশিল্পে নতুন দিগন্ত তৈরি হবে বলে প্রত্যাশা এ কর্মকর্তার।