তিন মাস ধরে অন্ধকারে শেখ হাসিনা সেতু

আব্দুর রশিদ জীবন, রংপুর প্রকাশিত: মে ৩১, ২০২২, ০৮:৫১ এএম

তিন মাস ধরে অকেজো গঙ্গাচড়ার মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত শেখ হাসিনা সেতুর সবগুলো বাতিগুলো। যে কারণে ১২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুর সৌন্দর্য হারিয়ে যেতে বসেছে। অন্ধকারে চুরি-ছিনতাইসহ প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা।

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় এক কিলোমিটার সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে থাকা বাতিগুলোতে তিন মাস ধরে আলো না জ্বলায় অন্ধকার হয়ে পড়ে সেতুটি। সন্ধ্যা হলে চরম দুর্ভোগে পড়েন পথচারীরা।  প্রতিনিয়ত সেতুতে ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। সেই সঙ্গে অন্ধকারাচ্ছন্ন সেতুতে চুরি-ছিনতাই, মাদক সেবনসহ বৃদ্ধি পেয়েছে নানা অসামাজিক কর্মকাণ্ড।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সেতুর ওপর আলোকসজ্জার জন্য বাতির ব্যবস্থা থাকলেও সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। সন্ধ্যার পর সড়কে নামে ঘুটঘুটে অন্ধকার। অন্ধকারে রাস্তায় ভালোমতো দেখতে না পেয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে।

গঙ্গাচড়ার লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নের বাসিন্দা শাহাদাত হোসেন বলেন, “সেতুর বাতিগুলো প্রায় তিন মাস ধরে জ্বলে না। যে কারণে অন্ধকারে চুরি-ছিনতাই রোজকার ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাদকসেবীদের আনাগোনাও বেড়েছে।”

সেতু এলাকায় বাস করা তারিকুল ইসলাম জানান, সেতুর বাতিগুলো দীর্ঘদিন থেকে নষ্ট। বাতিগুলো মেরামতের জন্য কোনো সরকারি লোকজনও আসে না। ফলে প্রায় প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হন পথচারীরা। কয়েক দিন আগে একটি মালবাহী ট্রলির চাকা পাংচার হয়ে সেতুর ওপরে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে। মোটরসাইকেলের চালকদের সেতুর ওপরে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে। সেতুর ওপরে বাতিগুলো সচল থাকলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত না।

রংপুর শহর থেকে ঘুরতে আসা ছোটন ও ইশিতা দম্পতি জানালেন, “সেতু এলাকাটির নিরিবিলি মনোরম পরিবেশ থাকায় আমরা প্রায় ছুটির দিনগুলোতে সন্ধ্যায় এখানে ঘুরতে আসি। আমরা প্রায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে সেতুর বাতিগুলো বন্ধ দেখি। তাই সেতুর ওপরে না থেকে পাশের দোকানে বসি।”

মাইদুল ইসলাম নামে আরেক ব্যক্তি বলেন, “সেতুর বাতিগুলো বন্ধ থাকায় সেতুর ওপর কিছু ছেলে-মেয়ে সেখানে অসামাজিক কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলে আমাদের চোখে পড়লে খারাপ লাগে। আবার এলাকার বাইরে থেকে কিছু বখাটে ছেলে সেতুর ওপরে এসে অসামাজিক কার্যকলাপ করে।”

এ বিষয়ে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদি বলেন, “সেতুর ওপরে বাতিগুলো বন্ধ থাকায় এখানে প্রায় সন্ধ্যার পর মোবাইল ফোন ছিনতাইসহ বহিরাগত বখাটে ছেলেরা সেতুর ওপরে এসে মাদক সেবন করে। দ্রুত সেতুর বাতিগুলো মেরামত করা না হলে এখানে আরও বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।”

এ বিষয়ে গঙ্গাচড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল হোসেন বলেন, “বিষয়টি আমার জানা ছিল না। তবে সেখানকার দায়িত্বে থাকা বিট অফিসারকে বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।”

সেতুর বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমিন বলেন, “সেতুর বাতিগুলো চালু করার বিষয় আমি উপজেলা প্রকৌশলীকে বলেছি। হয়তো কয়েক দিন সময় লাগবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তারা বাতিগুলো ভালো করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।”

সেতুর বাতি বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) মজিদুল ইসলাম বলেন, “বিষয়টি জেনেছি। কয়েক দিনের মধ্যে মেরামতের ব্যবস্থা করা হবে।”