হোলি আর্টিজানের ঘটনায় আটক ছিলেন সাবেক মেয়র লিটনের ভাই অনিন্দ্য 

রাজশাহী প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০২৫, ০২:৫৩ পিএম
অনিন্দ্য ও রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটন

রাজধানীর হোলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মামলা থেকে পার পেয়ে যাওয়া মুনতাসিরুল আলম অনিন্দ্যকে (৩৩) আটক করেছে যৌথ বাহিনী। শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাজশাহী নগরের কাদিরগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়।

অনিন্দ্যের বাবা শফিউল আলম লাট্টু রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি। তিনি জাতীয় ৪ নেতার অন্যতম প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এ এইচ এম কামারুজ্জামানের ভাই। সে হিসেবে অনিন্দ্য রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের চাচাতো ভাই। অনিন্দ্য ‘ডক্টর ইংলিশ’ নামে একটি কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন। প্রতিষ্ঠানটি যে জায়গায় অবস্থিত সেটি লিটনদের পৈতৃক বাড়ি।

শনিবার ভোররাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশের সদস্যরা কোচিং সেন্টারটি ঘেরাও করেন। এরপর অনিন্দ্যকে আটক করা হয়। এ ছাড়া মো. রবিন ও মো. ফয়সাল নামে অনিন্দ্যের দুই ‘সহযোগীকেও’ আটক করা হয়। তারা অনিন্দ্যের কোচিং সেন্টারে চাকরি করতেন বলে স্বজনেরা দাবি করেছেন। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাঁদের কোচিং সেন্টারটি থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।

এর আগে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, অভিযানে তিনটি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি; সামরিক মানের দুরবিন ও স্নাইপার স্কোপ; ছয়টি দেশীয় অস্ত্র, সাতটি বিদেশি ধারালো ডেগার, পাঁচটি উন্নতমানের ওয়াকিটকি সেট, একটি সামরিক মানের জিপিএস, একটি টিজার গান, বিভিন্ন দেশি-বিদেশি কার্টিজ, বিপুলসংখ্যক অব্যবহৃত সিম কার্ড, বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম, ছয়টি কম্পিউটার সেট, দেশি-বিদেশি মদ এবং ১১টি নাইট্রোজেন কার্টিজ জব্দ করা হয়েছে। নাইট্রোজেন কার্টিজগুলো বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।

অভিযান চলাকালে অনিন্দ্য জানান, একটি অস্ত্র তিনি পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলে দিয়েছেন। সেটি উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এনে পুকুরের তলদেশে তল্লাশি চালানো হয়। তবে সেটি পাওয়া যায়নি। এক মাসের গোয়েন্দা নজরদারির পর এ অভিযান চালানো হয় বলে সেনাবাহিনী জানিয়েছে।

অনিন্দ্য ২০১৬ সালের এপ্রিলে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক এ এফ এম রেজাউল করিম সিদ্দিকী হত্যাকাণ্ড এবং একই বছরের জুলাইয়ে গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার ঘটনায় ‘সন্দেহভাজন’ জঙ্গি হিসেবে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। সে সময় আলোচিত এ দুটি ঘটনায় অনিন্দ্যের সম্পৃক্ততা পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা।

অনিন্দ্যকে কোচিং সেন্টার থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় তার মা তহমিনা চৌধুরী এসেছিলেন। তবে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেননি। অনিন্দ্যের সহযোগী হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়া রবিনের মা নাসরিন খাতুন দাবি করেন, তার ছেলে কোচিং সেন্টারসংলগ্ন মসজিদের মুয়াজ্জিন। মসজিদের পাশেই কোচিং সেন্টার বলে অনিন্দ্য তাঁকে মাসখানেক আগে কোচিং সেন্টার দেখাশোনার জন্যও নিয়োজিত করেন। আটক ফয়সালের ভাই মো. ফারুক দাবি করেন, তাঁর ভাই আগে মসজিদের খাদেম ছিলেন। পরে কোচিং সেন্টারে অফিস সহকারী হিসেবে চাকরি নেন। রবিন ও ফয়সাল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত নয় বলে তাঁরা দাবি করেন।