যে গ্রামের কচুরিপানা রপ্তানি হয় ২৫ দেশে

পিরোজপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: আগস্ট ৭, ২০২৫, ০৯:৪৫ পিএম
পিরোজপুরের নাজিরপুরের গাওখালীর সোনাপুর গ্রামের শত শত পরিবার কচুরিপানায় ভাগ্য বদলেছে

কচুরিপানা একসময় ছিল আগাছা, সেটি হয়ে উঠেছে জীবিকার মাধ্যম। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পিরোজপুর জেলার বিল অঞ্চল নাজিরপুর উপজেলার গাওখালী ইউনিয়নের সোনাপুর গ্রামের শত শত পরিবার এখন নিজেদের ভাগ্য বদলাতে শুরু করেছে এই কচুরিপানার মাধ্যমে। তারা নদীনালা, খালবিল ও পুকুর থেকে ফেলনা এই জলজ উদ্ভিদ সংগ্রহের পর শুকিয়ে, সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে পৌঁছে দিচ্ছে বিশ্বের ২৫টির বেশি দেশে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষায়, ‘বিনা পুঁজিতে ব্যবসা।’ কারণ, কচুরিপানা কেনার খরচ নেই বললে চলে। শুধু সংগ্রহ, শুকানো ও পরিবহনের খরচ লাগে। এই কাজে যুক্ত হয়েছেন নারী-পুরুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থীরাও। সকাল হলে ছোট ছোট নৌকা নিয়ে তারা ছোটেন বিলের দিকে কচুরিপানা সংগ্রহ করতে। একেকজন প্রতিদিন কয়েক কেজি কচুরিপানা সংগ্রহ করে শুকিয়ে বাজারজাত করছেন। প্রতি কেজি শুকনা কচুরিপানার দাম ৫০ টাকা। গাওখালীর সোনাপুর এলাকায় প্রতি মাসে প্রায় ১০ টন কচুরিপানা বেচাকেনা হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

এই কাঁচামাল দেশের উত্তরাঞ্চলের রংপুরসহ কয়েকটি অঞ্চলের কুটিরশিল্পে পাঠানো হয়, যেখানে তৈরি হয় রঙিন পাটি, হাতব্যাগ, ফুলদানি, টুপি, জায়নামাজ এবং বিভিন্ন হস্তশিল্পের সামগ্রী। সেখান থেকে এগুলো রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জার্মানি, জাপানসহ বিশ্বের ২৫টি দেশে।

গৃহবধূ থেকে শুরু করে স্কুলপড়ুয়া পর্যন্ত সবাই এই কাজের সঙ্গে জড়িত। এটি এখন শুধু আয়ের উৎস নয়, বরং একটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মাধ্যম। আয়মান হাওলাদার নামের এলাকার এক যুবক বলেন, ‘এই কচুরিপানার ডগা দিয়ে বানানো হয় রঙিন ঝাড়, পাটি, পাপোশ এমনকি জায়নামাজ। বাইরের দেশে এসবের অনেক চাহিদা।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘শুনেছি যে গাওখালী এলাকার কচুরিপানা বিদেশে যাচ্ছে। এটা খুবই ইতিবাচক। যদিও এগুলো চাষ করে নয়, বরং প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো কচুরিপানা। আমরা খতিয়ে দেখছি, কীভাবে এই উদ্যোগে কৃষকদের সহায়তা করা যায়।’