‘আমি ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি, জানস?’

ফেনী প্রতিনিধি প্রকাশিত: জুলাই ১৩, ২০২৫, ০৩:২৩ পিএম

ফেনীর পরশুরামে দোকানের পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে এক ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে মো. সায়েম নামে যুবদলের সাবেক এক নেতা ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে। 

শনিবার (১২ জুলাই) রাতে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তারপর থেকে জেলাজুড়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। 

অভিযুক্ত মো. সায়েম পরশুরাম পৌর এলাকার দক্ষিণ কোলাপাড়া ৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের আহ্বায়ক ছিলেন। দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৫ জুন তাকে সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। 

জানা গেছে, পরশুরামের উত্তর বাজারের ব্যবসায়ী সুমন দীর্ঘদিন ধরে মো. সায়েমের কাছে কিছু টাকা পান। বাকিতে পণ্য কিনে অনেকবার আশ্বাস দিয়েও সায়েম ওই টাকা পরিশোধ করেননি। সর্বশেষ গত বুধবার (৯ জুলাই) পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে সায়েম ও তার অনুসারীরা সুমনের দোকানে এসে তাকে মারধর করেন।

এরপর ওই মারামারির ঘটনার ৫ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের একটি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

ভিডিওতে দেখা যায়, যুবদল নেতা সায়েম ও তার ভাতিজা ফয়সালসহ কয়েকজন ওই ব্যবসায়ীকে বেধড়ক মারধর করছেন। একপর্যায়ে মারতে মারতে তার গায়ের পোশাক খুলে নিয়েছেন। তারপরও তারা ক্ষান্ত হননি। বারবার টেনেহিঁচড়ে সুমনকে দোকান থেকে বের করার চেষ্টা করছেন। এ সময় গালিগালাজ করতে করতে সায়েম বলেন, ‘আমি ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি, জানস?’

ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী সুমনের ভাই ইব্রাহিম সাংবাদিকদের বলেন, “এক বছর আগে সায়েম বাকিতে জিনিসপত্র নিয়ে বারবার আশ্বাস দিয়েও টাকা দেননি। গত বুধবার পার্শ্ববর্তী একটি দোকানে এলে তার কাছে গিয়ে আমার ভাই পাওনা টাকাগুলো পরিশোধ করতে বলেন। ওই দিন রাতে আশপাশের অন্যান্য দোকান বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সায়েম ও তার ভাতিজা ফয়সালসহ আরও কয়েকজন দলবদ্ধ হয়ে এসে আমার ভাইকে বেধড়ক মারধর করে। আমরা এখন থানায় অবস্থান করছি। শিগগিরই এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।”

পরশুরাম পৌর বিএনপি সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মিসফাকুস সামাদ রনি বলেন, “নিয়ম না মেনে দলের শীর্ষ নেতাদের ছবি দিয়ে ব্যানার-ফেস্টুন বানানোর ঘটনায় তাকে গত ২৫ জুন সাংগঠনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটা নজরে এসেছে। আমরা কোনো অন্যায়কে প্রশ্রয় দেই না। দল হিসেবে তা সমর্থন করি না। তবুও কেউ যদি দলের নাম ভাঙিয়ে এ ধরনের অপরাধমূলক কাজ করেন, তাহলে তার দায়ভার দল নেবে না।” 

এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত সায়েমের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া মেলেনি। 
 
পরশুরাম মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নুরুল হাকিম বলেন, “এটি গত ৯ জুলাইয়ের ঘটনা। মূলত ব্যবসায়ী ওই ব্যক্তির কাছে ৪ হাজার ৯১০ টাকা পাওনা ছিল। এ টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে মারধরের ঘটনা ঘটে। পরবর্তী বণিক সমিতির সঙ্গে বসে তারা বিষয়টি সমাধান করেছে। শনিবার (১২ জুলাই) ওই ব্যবসায়ীকে বকেয়া টাকাগুলো পরিশোধও করেছেন। এটি কোনো রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নয়। আমরা ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীকে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে বলেছি। পুলিশ এ ঘটনার পরপরই একটি সাধারণ ডায়েরি করেছে। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”