‘শিরক’ তকমা দিয়ে কাটা হলো ২০০ বছরের প্রাচীন বটগাছ

মাদারীপুর প্রতিনিধি প্রকাশিত: মে ৬, ২০২৫, ০৩:০৫ পিএম

মাদারীপুর সদর ইউনিয়নের শিরখাড়া ইউনিয়নের আলম মীরের কান্দি এলাকায় প্রায় ২০০ বছরের পুরোনো একটি বটগাছ কেটে ফেলেছেন স্থানীয় আলেমরা।

‘বিদআত’সহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে সোমবার (৫ মে) সকাল ৯টার দিকে তারা সেখানে গিয়ে গাছ কাটা শুরু করেন। এরপর একে একে ডালপালা থেকে শুরু করে মূল দণ্ডায়মান গাছটির প্রায় ৭৫ শতাংশ কেটে ফেলা হয়।

এদিকে এত বছরের পুরোনো একটি গাছ কেটে ফেলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় ব্যাপক সমালোচনার শুরু হয়েছে। অনেক স্থানীয় বাসিন্দা বিষয়টি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয়রা জানান, কুমার নদীর পাড়ে অবস্থিত বটগাছটি ‘অলৌকিক ক্ষমতার’ অধিকারী বলে বিশ্বাস করেন অনেকে। এ কারণে প্রাচীন এই বটগাছের গোড়ায় অনেকে মোমবাতি জ্বালিয়ে মানত করতেন।

শিরখাড়া ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, স্থানীয় আলেমরা বটগাছটি কেটে ফেলেছেন। তবে গাছটি কাদের নেতৃত্বে কাটা হয়েছে সে তথ্য আমি এখনো পাইনি।”

আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, অনেক স্থানীয় বাসিন্দাই মনে করছেন গাছটি কাটা ঠিক হয়নি। তবে তারা ভয়ে কথা বলছেন না।

ওই ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আজম খান বলেন, “ওই বটগাছটির নিচে কিছু লোক ‘আচার’ পালন করত, যা আলেমরা আপত্তিকর মনে করেন। ইসলামে এ ধরনের বিধি-বিধান না থাকার কারণেই গাছটি কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এ কারণেই সবাই একত্রিত হয়ে বটগাছটি কাটা শুরু করেন। তারা কেউ কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নন।”

তিনি আরও বলেন, ইউনিয়নের সব গ্রাম থেকেই ওই ঘটনাস্থলে লোক গেছে; তাদের মধ্যে তার এলাকার মানুষও ছিল। তার এলাকার কাদের ব্যাপারী, দাদন হুজুর, কাবিল বেপারী, ইব্রাহিম হুজুরসহ তাদের স্থানীয় মসজিদের ইমামও ছিলেন।

গাছ কাটা সময় উপস্থিত ছিলেন শ্রী নদী গ্রামে বাসিন্দা মো. দাদন। এই যুবক বলেন, “মানুষ ওই বটগাছের নিচে ‘পূজা’ করত বলে স্থানীয় আলেমরা সেটা মেনে নিতে পারেননি। এ কারণেই গাছটি কেটে ফেলা হয়েছে। গাছটি কাটায় প্রায় ২০০ লোক অংশ নেন।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, “আমি এই বিষয়টি গতকাল রাতে জানতে পেরেছি। এ ঘটনার সঙ্গে যারা সংশ্লিষ্ট, তাদেরকে ডাকা হয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা বলে আমি পরবর্তীতে এ বিষয়টি আপনাদেরকে জানাতে পারব—যে কারণে বিষয়টি নিয়ে আমি এখন কথা বলতে চাচ্ছি না।”